সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন
* বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
সু-প্রভাত বাংলাদেশ : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের দুর্নীতি তদন্ত অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের অগ্রাধিকারে আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাজগুলো শুরু হয়েছে। আরও বিস্তারিত কার্যক্রম জানতে পারবেন, এটা আমাদের টপ প্রায়োরিটি।’মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে কতটুকু তথ্য সরকার জানতে পেরেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি সামারি প্রতিবেদন গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের কাজগুলো শুরু হয়েছে। আরও বিস্তারিত কার্যক্রম আপনারা জানতে পারবেন। এটা আমাদের টপ প্রায়োটিরি। ’শেখ হাসিনা এখানে একটি চোরতন্ত্র জারি করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘সেই চোরতন্ত্রের কারা কারা এই মহাচুরিতে জড়িত ছিল, এটা বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায়। তাদের জানানোটা আমাদের একটা নৈতিক দায়িত্ব। উনি কী পরিমাণ চুরি করেছেন, সামনে সেটা অবশ্যই আপনারা জানতে পারবেন। কী পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে, তার একটা ধারণা কিন্তু শ্বেতপত্র দিয়েছে। ১৬ মিলিয়ন ডলার প্রতি বছর পাচার হয়েছে। এটা বাংলাদেশের মানুষের টাকা।’তিনি বলেন, ‘আর ব্যাংকগুলো কীভাবে ডাকাতি হয়েছে, আপনারা তো দেখেছেন। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে এটা তদন্ত করছি। তার সময়ে যত ধরনের চুরি হয়েছে। লুণ্ঠনতন্ত্র, চোরতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন..। ইতোমধ্যে একটা রিপোর্ট এসেছে, তার পিয়ন যেটা আগে উনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ৪০০ কোটি টাকা (অবৈধ উপার্জন করেছেন)। পরে আমরা দেখেছি, সেখান ট্রানজেকশন হয়েছে ৬২৮ কোটি টাকা।’শেখ হাসিনাকে কবে নাগাদ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন— এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে লিগ্যাল প্রসেস খুব জোরেশোরে শুরু করছি। আইনের শাসন মানতে হলে তাকে তার সময়টা দিতে হবে। চাইলেও অনেক কিছু খুব দ্রুত আপনি করতে পারবেন না। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থার মধ্যে যতটা দ্রুত সম্ভব, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আমরা বার বার বলছি শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন চাই। সেই অনুযায়ী পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কথা বলেছেন। আশা করবো, যত দ্রুত সম্ভব তার প্রত্যাবর্তন হবে। শেখ হাসিনা বিচারের মুখোমুখি হবেন।’এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, শেখ হাসিনার অপরাধগুলো ভয়াবহ। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে যে ধরনের অপরাধগ হয়েছে, এটা তো চিন্তা করা যায় না। পুরো পৃথিবী হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে দেখছে, তার ক্রাইমটা কী ছিল। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোক গুমের শিকার হয়েছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন কয়েক হাজার লোক। জুলাই-আগস্টে মারা গেছেন প্রায় ১৫-শ জনের মতো। কত ভয়ানক একটা বিষয়! মানবাধিকার লংঘন হয়েছে, এটা আঁৎকে ওঠার মতো।’বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকারআওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে বঞ্চনার শিকার ৭৬৪ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার উচ্চতর পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির আদেশ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের মধ্যে ১১৯ জনকে সচিব, ৪১ জনকে গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড)-এ, ৫২৮ জনকে অতিরিক্ত সচিব, ৭২ জনকে যুগ্ম সচিব এবং ৪ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বরাত দিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক কর্মকর্তার জন্য প্রযোজ্য তারিখ থেকে উচ্চতর পদে পদোন্নতির আদেশ জারি করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি বাস্তবায়নে বকেয়া বেতন আনুতোষিক ও পেনশন বাবদ এককালীন আনুমানিক ৪২ কোটি টাকা এবং পরবর্তীকালে পেনশন বাবদ আনুমানিক বার্ষিক ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছে।এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর জনপ্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর সাবেক অর্থসচিব এবং বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।বিগত সরকারের আমলে ২০০৯ সাল থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সরকারি চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চিত এবং এসময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে রিভিউ কমিটি ৭৬৪ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের এ ব্যাপারে বিশদ আলোচনা শেষে তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির আদেশ জারির সিদ্ধান্ত হয়।‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদনগণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী গণভবনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে।লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ ছাড়া পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত রেখে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রকৃত তথ্য সহকারে প্রতিবেদন করার আহবানপারসেপশন বা ধারণা থেকে নয় প্রকৃত তথ্য সহকারে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। দেশের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।শফিকুল আলম বলেন, ‘অনেক সময় পারসেপশনের ওপর অনেকে রিপোর্ট করে ফেলেন। আশেপাশে তিনজন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে, এটা থেকে হয়ত পারসেপশন হয় যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে।’‘আমার অনুরোধ হলো যেটা প্রকৃত ঘটছে, সেটা আপনারা লেখেন। আমরা তথ্যের ক্ষেত্রে আরও ট্রান্সপারেন্সি চাই। পুলিশকে আমরা বলে দিয়েছি যে, তারা যেন অপরাধের তথ্য সবসময় নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে,’ যোগ করেন তিনি।প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘এতে পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটা ট্রান্সপারেন্সির সম্পর্ক তৈরি হবে। কী হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে, কী মামলা হচ্ছে, কোন ধরনের অপরাধ বাড়ছেÍতা দেখলে জনগণের প্রকৃত ধারণা তৈরি হবে।’তিনি বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিন দেখেছি যে বেশ কিছু সংবাদপত্র দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ করেছে। এর মধ্যে একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল “বেড়েছে খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।” প্রতিবেদনটি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা দেখেছি যে এই প্রতিবেদনে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। যদি পুলিশকে ভালোমতো জিজ্ঞাসা করা হতো, তারা একটা ভালো চিত্র তুলে ধরতে পারতেন। অনেক ক্ষেত্রে অনেকে আনভেরিফায়েড ডেটা দিয়ে দেয়।’এসময় প্রেস সচিব শফিকুল আলম পুলিশের তৈরি গত কয়েকমাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে যারা ক্রাইম বিট করেন, তারা জানেন যে বাংলাদেশে হত্যার হার প্রতি মাসে ২০০-৩০০ এর বেশি হয় না। এটা এর মধ্যেই থাকে, যদি না ব্রুটাল সরকার জনগণের প্রতি হত্যাযজ্ঞ না চালায়।